Become a member

Get the best offers and updates relating to Liberty Case News.

― Advertisement ―

spot_img

পুরুষও কাঁদে

দত্ত বাড়িতে ছেলে হয়ছে, দেখলাম বাবা মা সবাই আনন্দিত । পাশ থেকে ঠাম্মা বলল, বুড়ো বয়সের লাঠি এসেছে খোকা তোর চিন্তা আর কি ? আনন্দে বাবার চোখে জল পুরুষও কাদে...
Homeবিনোদনকথাই যখন শেষ কথা… তখন ‘লজ্জা’ পাবে কে?

কথাই যখন শেষ কথা… তখন ‘লজ্জা’ পাবে কে?

“লজ্জা নারীর ভূষণ”।এই আপ্তবাক্যের নীচেই ঢাকা পড়ে যায় কত গভীর ক্ষত। এই আড়াল কতটা সরাতে পারল হইচই-এর নতুন সিরিজ ‘লজ্জা’? লিখছেন পরমা দাশগুপ্ত

সর্বংসহা নারীর উত্তরণের গল্প। সরলরেখায় চলা ঘটনাক্রম। একেবারে মোটা দাগে সাদা-কালো চরিত্রের ভাগাভাগি।

নিশ্চয়ই ভাবছেন, সেই একই তো! আর ঠিক সেখানেই বেশ খানিকটা আলাদা হইচইয়ের নতুন সিরিজ। কারণ তার থিম। অদিতি রায়ের পরিচালনা এবং সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি, চিত্রনাট্য এবং সংলাপের বলিষ্ঠতায় ভর করে তাই আলাদা করে নজর কাড়ছে ‘লজ্জা’।

গার্হস্থ্য হিংসা মানে কি শুধুই শারীরিক নির্যাতন? একেবারেই নয়। গায়ে হাত না তুলে, কোনও রকম শারীরিক ক্ষতি না করে, স্রেফ কথার নিষ্ঠুরতাতেও খাদের কিনারে ঠেলে দেওয়া যায় জীবনসঙ্গীকে। মনোবল ভেঙে চুরমার করে, কথার প্যাঁচে তার জীবনটাকে শেষ করে দেওয়া যায়। সিরিজ মুক্তির পরে অজস্র ফেসবুক পোস্ট, কমেন্ট বলছে, বাড়িতে ভার্বাল অ্যাবিউজ অর্থাৎ কথার মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন সইতে হওয়া মহিলাদের সংখ্যাটা আমাদের চারপাশে নেহাত কম নয়। আর এই ঘোর বাস্তবটাকেই এই সিরিজে তুলে এনেছে হইচই। এবং ভাবতে শেখাচ্ছে, ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়ি টানতে শেখা জরুরি। বুঝতে শেখাচ্ছে ভার্বাল অ্যাবিউজ ঠিক কতটা ক্ষতি করে দিতে পারে মনের এবং তখন সবটা খুলে বলা, সাহায্য চাওয়াটা দোষের তো নয়ই, বরং জরুরি।

এ কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে নরমসরম এক নারী জয়া (প্রিয়াঙ্কা সরকার), উঠতে-বসতে স্বামী পার্থর (অনুজয় চট্টোপাধ্যায়) অশ্লীল গালিগালাজ, কটূক্তি, ব্যঙ্গ যার নিত্যসঙ্গী। বাবার সুরে সুর মিলিয়ে মেয়ে শ্রুতিও অবজ্ঞার চোখে দেখে মাকে। শাশুড়িও (খেয়ালি দস্তিদার) লোকের সামনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও তার বাইরে সর্বক্ষণ মানসিক ভাবে পিষে দিতে চান বৌমাকে। অপমানের এই ত্রিফলায় বিদ্ধ হতে হতে জয়ার আত্মবিশ্বাস তলানিতে, সর্বক্ষণ তটস্থ থাকতে গিয়ে ভুল হতে থাকে রোজকার কাজেও। নিজের বাড়ির লোকেদের কাছেও যে ভরসা আশা করেছিল জয়া, সেটুকুও মেলেনি ঠিকমতো। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত জয়ার এই পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়ায় তার এনজিও-সহকর্মী মৌ (শাঁওলি চট্টোপাধ্যায়) এবং তার উকিল বন্ধু শৌর্য(ইন্দ্রাশিস রায়)। কাছের মানুষদের সঙ্গে এই লড়াই কি জিতবে জয়া? তা নিয়েই এগিয়েছে কাহিনি।

প্রতি মুহূর্তে হারতে বসা জয়ার বিপন্নতা, অসহায়তা, আবেগের দোলাচলকে নিখুঁত করে ফুটিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। ক্লিশে ঘটনাক্রমেও তাই তার মন ভেঙে চুরমার হওয়া ছুঁয়ে যায় প্রতিটা দৃশ্যে। এমন সাবলীল অভিনয়ের বিপরীতে কাজটা সহজ ছিলনা অনুজয়ের। কিন্তু একেবারে কপিবুক খারাপ মানুষ পার্থর চরিত্রে এতটাই স্বতঃস্ফুর্ত তাঁর অভিনয়, যে জয়াকে অপমানের প্রতিটা দৃশ্যে তাঁকে ঘৃণা করতে বাধ্য করে ছাড়েন। জয়ার ভরসাস্থল হয়ে ওঠা দুটো মানুষ, মৌ এবং স্পষ্টবাদী উকিল শৌর্যর চরিত্রে ভাল লাগে শাঁওলি এবং ইন্দ্রাশিসকে। পরিবারে একমাত্র যে মানুষটা জয়াকে বোঝে, সেই বৌদির চরিত্রকে যত্নে ফুটিয়েছেন স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ও। শাশুড়ির চরিত্রে ছোট্ট পরিসরে নজর কেড়েছেন খেয়ালি। চোখের সামনে পার্থর কথায় জয়াকে নিত্য হেনস্থা হতে দেখা বন্ধুদের আচরণগুলোও যেন বাস্তব সমাজেরই আয়না। মনোবিদের এক সংক্ষিপ্ত চরিত্রে কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যদিও তেমন কিছু করার ছিল না।

তবে কয়েকটা জায়গা একটু বাড়তি ঠেকে। যেমন নিজের দিদির এমন বিপর্যস্ত অবস্থা দেখেও তাকে আরও বেশি করে অপমান করে চলা, নিজের স্বার্থ দেখতে গিয়ে জয়ার পায়ের তলার জমি কেড়ে নেওয়া বোনের চরিত্রটা খানিক অতিরঞ্জন। মেয়ের এমন অবস্থা দেখেও মা সবচেয়ে স্বাভাবিক প্রশ্নটা তাকে করছেন না, এটাও খানিক অবাস্তব। জয়া বা পার্থর চরিত্র এতটা সাদা-কালো না হয়ে খানিক লেয়ারড হলেও পারত। আর এই যে গল্প শেষ না করে দর্শকদের অপেক্ষা করিয়ে রাখার ট্রেন্ড, এটাও বড্ড ক্লিশে হয়ে যাচ্ছে।

তবু শুধু বিষয়বস্তুর গুরুত্বের কারণেই এ সিরিজ দেখা জরুরি। কারণ, সমাজ যতই এগোক, মনের ব্যাপারে আমরা যে এখনও বড্ড মুখচোরা!