মাটিতে একটা লোক পড়ে। তিন-চারটে অল্পবয়সি ছেলে তার হাত-পা টেনে ধরে রেখেছে। আর হাতে একটা বড় ডান্ডা নিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা সেই লোকটিকে বেধড়ক পিটিয়ে চলেছে দলের পান্ডাগোছের, ভারী চেহারার আর একটি লোক। লাঠি মারার আগে সে পায়ে করে মাড়িয়েও দিচ্ছে মাটিতে পড়ে মার খাওয়া শরীরটাকে।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োর সত্যি-মিথ্যে খুঁটিয়ে জানা না গেলেও ডান্ডাধারীর মুখ এবং কাজকর্ম দেখে অনেকেই তাকে চিনে ফেলেছে বিট্টু বজরঙ্গী ওরফে রাজকুমার বলে। গত বছর হরিয়ানার নুহে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে যে টানা অশান্তি চলেছিল, তাতে প্রাথমিক ইন্ধনটা স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনী চালানো এই বিট্টুই জুগিয়েছিল বলে অভিযোগ। নুহের হিংসার ঘটনায় গ্রেফতারও হয়েছিল সে। পুলিশের উপরে হামলাতেও সে অভিযুক্ত। আপাতত জামিনে রয়েছে বজরং দলের সদস্য বিট্টু।
ভাইরাল ভিডিয়োতে এক জন পুলিশকেও দেখা যাচ্ছে। বিট্টু যখন সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে লাঠিপেটা করছে মাটিতে পড়ে থাকা লোকটিকে, তখন ওই পুলিশকর্মীটি গদাইলস্করি চালে উঠে দাঁড়াচ্ছেন চেয়ার থেকে। বাধা দেওয়ার কোনও ইচ্ছে অন্তত তাঁর শরীরী ভাষায় নেই। স্থানীয় থানা জানাচ্ছে, তাদের কাছে নিগৃহীতের তরফে কোনও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত জমা পড়েনি। তাই কোনও মামলা দায়ের হয়নি। গ্রেফতারিও নেই।
ভিডিয়োটি গত ১ এপ্রিলের বলে জানাচ্ছে পুলিশ। যে লোকটিকে মার খেতে দেখা যাচ্ছে, সে ফরিদাবাদের সারুরপুরের বাসিন্দা। নাম, শামু। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাড়ার দু’টি মেয়েকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে নিজের বাড়িতে ডেকে এনেছিল সে। উদ্দেশ্য ছিল তাদের যৌন নিগ্রহ করা। কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা টের পেয়ে বাড়িতে ঢুকে শামুকে পাকড়াও করেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাজির হয় বিট্টু বজরঙ্গীর ‘ফরিদাবাদ গোরক্ষা বজরং ফোর্স’-এর লোকজন। শামুকে তারা তুলে নিয়ে যায় ফরিদাবাদের সঞ্জয় এনক্লেভে, বিট্টুর বাড়িতে। জানা যাচ্ছে, মারধরের ভিডিয়োটা সেই বাড়ির বাইরেই তোলা। প্রথমে ওই দু’টি মেয়ের মধ্যে এক জনের মা শামুকে মারধর করেন। তার পরে শাগরেদদের নিয়ে শামুকে লাঠিপেটা করা শুরু করে দেয় বিট্টু নিজেই। শামুর কোনও কাকুতি-মিনতিতেই কোনও লাভ হয়নি।
নরেন্দ্র মোদীর ‘বিকশিত ভারতে’ গেরুয়া গোরক্ষকবাহিনীর উপদ্রবের ছবিটা বছরের পর বছর ধরে কেন বদলায় না, সেই প্রশ্ন এ দিনও তুলেছেন কেউ কেউ।
এ বারের ভিডিয়ো পেয়ে কী করছে পুলিশ? স্থানীয় সারন থানার ওসির বক্তব্য, ‘‘ভিডিয়োটি দেখেছি। যে মার খেয়েছে, তাকে খোঁজা হচ্ছে। তার কাছ থেকে অভিযোগ পেলেই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ আর খোঁজ না পেলে? ওসি বলছেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে ভিডিয়ো ও সমাজমাধ্যম থেকে অভিযুক্তদের ধরে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’