শনিবার থেকে ঠাকুরনগরে শুরু হল মতুয়া ধর্ম মহামেলা। প্রথমদিনেই “কামনাসাগরে” পুণ্যস্নান সারলেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস এবং বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। আগামী কয়েকদিনে কেন্দ্রের এবং রাজ্যের নেতারা এই মেলায় উপস্থিত থাকতে পারেন।
হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে মেলার প্রথম প্রহরেই ১১ লক্ষ ভক্তের সমাগম। বেলায় দূরদূরান্ত থেকে আরও ভক্তেরা পৌঁছবেন ঠাকুরবাড়িতে। ঠাকুরনগর স্টেশন থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রেকর্ড ভাঙা ভিড়ে, ভক্তদের মিছিলে অবরুদ্ধ রাস্তাঘাট। আজ পুণ্যতিথিতে ঠাকুরনগরের কামনাসাগরে পুণ্যস্নান সারছেন ভক্তরা। কয়েকশো ভক্ত দণ্ডি কেটে পৌঁছন ঠাকুরবাড়িতে। ডঙ্কা, করতাল, কাসরের ধ্বনিতে গমগম করছে গোটা ঠাকুরনগর। এই মেলা চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
প্রচন্ড ভিড়ের মাঝে বাংলাদেশ থেকে আসা দীনদাস বিশ্বাস বললেন, “গত ১৫ বছর ধরে ঠাকুরনগরের মেলায় আসি। মেলার জন্য আমাদের ছোট সংগঠনের প্রস্তুতি চলে কয়েক মাস ধরে। এত ভিড়েও আমাদের দম ফুরায় না। ডঙ্কার আওয়াজে আরও যেন উজ্জীবিত হই।” অন্যদিকে ওড়িশার বাসিন্দা মদনমোহন হাওলাদার কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ঠাকুরবাড়ির এই উৎসব ঘিরে আমরা বরাবরই আবেগপ্রবণ। পুণ্যস্নান না সারা পর্যন্ত উত্তেজনায় ঘুম আসে না। সারারাত জায়গায় জায়গায় কীর্তন হয়। ভোররাতে উঠেই কামনাসাগরের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি সকলে।”
ভোরবেলায় নিজের বাড়িতে ভক্তদের ভিড়ের মধ্যে বসেছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। সারারাত জেগে। তবুও ক্লান্ত নন। মমতাবালা বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে সরকারি ছুটির ঘোষণা করেছেন। সেই কারণে গত কয়েক বছর ধরে প্রথমদিনে ব্যাপক ভিড় হয়। পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসন সহযোগিতা করে। ঠাকুরনগর স্টেশন থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত অসংখ্য জলসত্র হয়েছে। এবছর আমরা প্রসাদের ব্যবস্থাও করেছি। কোনও ভক্ত যাতে অভুক্ত না থাকেন, তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।”
অনেকেরই ধারণা, আগামিকালও ১০ লক্ষের বেশি ভক্তের সমাগম হতে পারে। শুধুমাত্র মমতাবালা, শান্তনু ঠাকুরের বাড়ির উঠোনেই নয়, হাজার হাজার মানুষ ঠাকুরবাড়ির আশেপাশের বাড়িগুলোতেও ঠাঁই নিয়েছেন। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিভাজন থাকলেও, বরাবরের মতো এই মহামেলা বাস্তবেই মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।