একটা সময় ছিল, যখন রাজপ্রাসাদের বারান্দায় বেজে উঠত রাজসঙ্গীত, নাটমন্দিরে জমত সাংস্কৃতিক আসর, আর কলকলি নদীর ধার ঘেঁষে ছড়িয়ে থাকত লালগোলার গৌরব। আজ সেই ইতিহাস শুধুই স্মৃতি, আর লালগোলা রাজবাড়ি দাঁড়িয়ে আছে একা, ভগ্নদশায়, নিশ্চুপ।
মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি ঐতিহাসিক রাজবাড়ির মধ্যে অন্যতম লালগোলা রাজবাড়ি আজ অবহেলার অন্ধকারে ধ্বংসের মুখে। কাশিমবাজার, নিমতিতা ও লালগোলা রাজবাড়ি বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও শিক্ষার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। উত্তরে সীমান্তবর্তী শহর লালগোলা একসময় ছিল গভীর জঙ্গলে ঘেরা, আর এখন তার চারপাশ ঘিরে রয়েছে ভাগীরথী, পদ্মা ও ভৈরব নদ। একপারে রাজশাহীর বাংলাদেশ।
লালগোলার এই ঐতিহাসিক রাজবাড়ি গড়ে তোলেন মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়। আজ সেই রাজবাড়ি ও সংলগ্ন গেস্ট হাউস ভগ্নদশায়। ইতিহাসপ্রেমীদের দাবি, অবিলম্বে এই রাজবাড়িকে সংরক্ষণ করতে হবে। এখানেই রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত শৃঙ্খলিত কালীমূর্তি, হাজারদুয়ারি নামের অতিথিশালা, কলকলি নদী, পদ্মার চর ও মুক্তকারাগার—সব মিলিয়ে এক সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র।
শোনা যায়, কলেজ গড়ার উদ্দেশ্যে প্রয়াত মহারাজার উত্তরসূরিদের কাছ থেকে প্রায় আট লক্ষ টাকায় রাজপ্রাসাদ, অতিথিশালা, কালীমন্দির, নাটমন্দির, আধ কিলোমিটার লম্বা কলকলি নদী ও প্রায় ৩০০ বিঘার আমবাগান সহ জমি কেনা হয়। কিন্তু সেই কলেজ আর গড়ে ওঠেনি। বরং ১৯৮৭ সালের ৩১ জানুয়ারি সেখানে শুরু হয় সাজাপ্রাপ্তদের জন্য মুক্ত-সংশোধনাগার।
দুঃখজনকভাবে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় রাজবাড়িটি আজ অপ্রতিরোধ্য ভাবে ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এই রাজবাড়ি গড়ে উঠলে যেমন ইতিহাস রক্ষা পাবে, তেমনই বাড়বে স্থানীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান। ইতিহাসের সাক্ষী এই রাজবাড়ি আজ আমাদের সক্রিয় উদ্যোগের অপেক্ষায়।