পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা পৌরসভা এলাকায় টোটো চলাচলের উপর মাসিক ১০০ টাকা টোল আদায়কে ঘিরে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে গুসকরা শহরজুড়ে। পৌরসভার যুক্তি, টোটো চালকরা পৌরসভার বিভিন্ন পরিষেবা ব্যবহার করেন, তাই এই ফি আদায় ন্যায্য। তবে টোটো চালকদের একটি বড় অংশ এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাঁদের দাবি, এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং তাঁদের স্বল্প আয়ের উপর বাড়তি বোঝা চাপাচ্ছে পৌরসভা। সাধারণত দশ চাকার গাড়ি শহরে প্রবেশ করলে টোল আদায় করা হয়।
কিন্তু গুসকরা পৌরসভা এবার টোটোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চালু করেছে। প্রতি টোটো পিছু ১০০ টাকা করে মাসিক ফি নেওয়া হচ্ছে এবং এর জন্য দশ চাকার গাড়ির টোল আদায়ের কুপনেই ‘টোটো’ স্ট্যাম্প দিয়ে রশিদ দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতি এবং ফি-এর বৈধতা নিয়েই মূলত প্রশ্ন উঠেছে। গুসকরা পৌরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায় এই পদক্ষেপের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে জানিয়েছেন, টোটো চালকরা পৌরসভার রাস্তা, পানীয় জল এবং আলো ব্যবহার করছেন। তাই তাঁদের কাছ থেকে সামান্য ফি আদায় করা অন্যায় নয়। তিনি আরও জানান যে এই টাকা পৌর তহবিলে জমা হবে এবং এলাকার উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হবে। এছাড়াও, টোটো চালকদের সমস্যা সমাধানে একটি ইউনিয়ন গঠনের মাধ্যমে একটি সুসংহত ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে সাধারণ নাগরিকরাও সুবিধা পান।
টোটো চালকদের অভিযোগ, তাঁদের সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। এর উপর মাসিক ১০০ টাকা অতিরিক্ত ফি তাঁদের জন্য বিরাট বোঝা। তাঁরা দাবি করছেন যে শহরের টোটো চালকরা যেহেতু পৌরসভায় বাড়ির ট্যাক্স দেন, তাই পানীয় জল বা আলোর জন্য আলাদা করে টোটোর উপর ফি নেওয়া উচিত নয়। বিজেপি পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের দাবি, অবৈধভাবে তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভা এই টাকা আদায় করছে।
এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি টোটো চালকদের সমস্ত রকম পরিষেবা বিনা পয়সায় দেওয়া হোক বলে দাবি করা হয়। পৌরসভার নম্বর পাওয়া টোটো চালক সূর্যদেব মাঝি, মিঠুন মাঝি জানিয়েছেন, তাঁদের বলা হয়েছে এই ফি দিলে তবেই তাঁরা শহরে টোটো চালাতে পারবেন, অন্যথায় বাইরে থেকে আসা টোটো ঢুকতে দেওয়া হবে না। আরেক টোটো চালক বামা রায় জানিয়েছেন, তাঁরা টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের আয় খুবই সীমিত। পরিবহন দপ্তরের আইন অনুযায়ী টোটোর জন্য এভাবে টাকা আদায়ের কোনো সরকারি নির্দেশিকা নেই। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, গুসকরা পৌরসভা কিসের স্বার্থে দরিদ্র টোটো চালকদের কাছ থেকে মাসিক ফি আদায় করছে? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রাজ্যের প্রায় সব শহরেই টোটো চলাচল নিয়ে কমবেশি সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে ই-রিকশা ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
কাটোয়া শহরে এরই মধ্যে ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন এবং হলোগ্রাম স্টিকার দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গুসকরা শহরেও টোটোর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে; শহর এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে ৫০০-র বেশি টোটো নিয়মিত চলাচল করে। দুই মাস আগে প্রায় ৩০০ টোটোকে স্টিকার দেওয়া হয়েছে এবং অভিযোগ, এদের কাছ থেকেই মাসিক ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। গুসকরা শহরের টোটো চালকদের মধ্যে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। সামান্য পানীয় জলের ব্যবহারের জন্য কেন প্রতি মাসে ১০০ টাকা দিতে হবে? এই বিতর্ক অদূর ভবিষ্যতে কীভাবে সমাধান হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।