বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কাঁথি পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের করকুলির বাসিন্দা। তাঁর বাড়ি শান্তিকুঞ্জ থেকে বড় দারুয়ার দুরত্ব মেরে কেটে আড়াই কিমি। আর খড়্গচন্ডী মহা শ্মশানের দুরত্ব দেড় কিমি। এই মহাশ্মশানে এক হিন্দু যুবকের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে সহায়তা করলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কাঁথি পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বড় দারুয়ার বাসিন্দা টোটোন গিরি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন। বছর ৪৫-এর এই যুবকের পেশা ছিলো টোটো চালানো। বড় দারুয়ার গ্রামের প্রায় ১৫০টি পরিবারের বাস।
এর মধ্যে একমাত্র টোটোন গিরির পরিবার ছাড়া বাকী সকলেই মুসলিম। মৃত যুবকের পরিবার সুত্রে জানা গেছে অতিরিক্ত সুগারের জন্যে অসুস্থ্য হয়ে টোটোন বাবু কাঁথি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বুধবার রাত্রে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে মৃত এই যুবকের বাড়িতে আছে তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, ২ ছেলে আর এক ভাই। ফলে শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করাই ছিলো পরিবারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জের মত। তবে খুব সহজেই হিন্দু রীতি মেনে সমস্ত কাজ সম্পন্ন হল স্থানীয় বস্তির মহল্লাদার সামসুদ্দিন রহিম, বস্তির সর্দার হাসান আলি সহ প্রতিবেশী ওসমান আলি, সেক কমরুল প্রমুখ সংখ্যালঘু পরিবারের পুরুষ-মহিলা সদস্যরা এগিয়ে আসায়।
মৃত হিন্দু যুবক টোটোন গিরির ছেলে জয় গিরি জানিয়েছেন, আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাবা অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতলে ভর্তি থাকায় গত কয়েকদিন ধরেই বড় সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এর উপর রাত্রের দিকে বাবা আচমকা পরলোক গমন করায় ভেঙ্গে পড়েছিলাম। সেই সময় কাকু-দাদারা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
সদ্য পিতৃহারা যুবক জয় গিরি বলেন, তার বাবার অসুস্থ্যতার সময়ে টাকা দিয়ে সাহায্য করার পাশাপাশি শ্মশানে শেষকৃত্যের জন্য বামুন ডাকা, কির্তনীয়াদের ডাকা, স্বর্গ রথের ব্যাবস্থা করা, বাবার শেষ যাত্রায় রাস্তায় খই ছড়ানো সব কিছুই এই কাকু-দাদা-ভাইয়েরা করেছে। আমরা হিন্দু ওরা মুসলিম এই ধর্মের ভেদাভেদি ছিলো না। সামসুদ্দিন রহিম-হাসান আলিরাও বলছেন, মানুষ বিপদে পড়েছে। আমার প্রতিবেশী বিপদে পড়েছে। তাকে সাহায্য করতে হবে। এটাই বড় কথা। সে হিন্দু না মুসলিম এটা কে দেখছে? এদিন রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বাংলা আবার দেখলো সম্প্রীতির শক্তি।