ভয়াবহ তুষারধ্বসের পরোয়া না করেই জঙ্গিদের নিকেশ করতে বিশেষ মিশনে লড়াই করতে গিয়েছিলেন দুই বাঙালি বীর সেনানী। জঙ্গিদের নিকেশ করতে করতেই হঠাৎ করে ভয়াবহ তুষার ধসের মধ্যে নিখোঁজ হয়ে যান ২ বাঙালি বীর সেনা। জীবিত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধারের জন্য ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে যাবতীয় চেষ্টা চালানো হলেও তা সম্ভব হয়নি।
অবশেষে কফিনবন্দী হয়েই ঘরে ফিরতে হচ্ছে বাংলার দুই সেনাকে। জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় চলা সন্ত্রাস দমন অভিযানে গিয়ে শহিদ হয়েছেন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানার রুকুনপুর বলরামপাড়া গ্রামের সেনা জওয়ান পলাশ ঘোষ। ভারতীয় সেনার এলিট প্যারা স্পেশাল ফোর্সের সদস্য ছিলেন তিনি। সেনা সূত্রে জানা গেছে, ৬ ও ৭ অক্টোবর কোকেরাংয়ের আহলান গাডোল এলাকায় জঙ্গি দমন অভিযানে নিখোঁজ হন পলাশ ঘোষ ও ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ।
কর্তব্যরত অবস্থায় তুষারধসে চাপা পড়েন তাঁরা। বৃহস্পতিবার সুজয় ঘোষের দেহ উদ্ধার হয়, আর শুক্রবার উদ্ধার হয় পলাশ ঘোষের নিথর দেহ ও তাঁর বন্দুক। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে পোস্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রতিকূল আবহাওয়া ও তুষারধসে আমাদের বাংলার দুই সাহসী প্যারা-কমান্ডোর শহিদ হওয়ার ঘটনায় আমি শোকাহত। বীরভূমের ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ এবং মুর্শিদাবাদের ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষকে দেশরক্ষায় তাঁদের অসীম বীরত্ব, নিষ্ঠা এবং আত্মত্যাগের জন্য আমার স্যালুট জানাই। তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। এই শোকের সময়ে আমাদের সরকার দুই পরিবারকেই সম্ভাব্য সকল সহায়তা করবে।’
দেশের জন্য নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে যেভাবে প্রবল প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে নেমেছিলেন প্যারো ফোর্সের দুই জওয়ান, সেজন্য তাঁদের স্যালুট জানিয়েছে ভারতীয় সেনা। ভারতীয় সেনার চিনার কোরের তরফে বলা হয়েছে, ‘মারাত্মক বিরূপ আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে কোকেরনাগের কিশতোয়ার রেঞ্জে লাগাতার জঙ্গি-বিরোধী অভিযান চালানোর সময় দুই বীর ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষ এবং ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ যে সর্বোচ্চ বলিদান দিয়েছেন, সেজন্য তাঁদের সম্মান জানাচ্ছে চিনার কোর।’ সেইসঙ্গে ভারতীয় সেনার চিনার কোরের তরফে বলা হয়েছে, ‘তাঁরা যে সাহসিকতা এবং নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন, তা আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে। বীর জওয়ানদের সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগকে স্যালুট জানাচ্ছে চিনার স্কোর। আমরা শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।
আমরা তাঁদের কল্যাণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বুধবার কাশ্মীরের দক্ষিণ অনন্তনাগের গাদুলে আতঙ্কবাদী নিকেশ অপারেশন চলায় সেনাবাহিনী। সেই অভিযান দলে ছিলেন বাংলার দুই প্যারা কমান্ডো। ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষ (৩৮) ও ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ (২৮)। অভিযানের সময় তুষারঝড়ের মধ্যে পড়েন তাঁরা। নিখোঁজ হয়ে যান পলাশ ও সুজয়। দুই প্যারা কমান্ডোর খোঁজে তল্লাশি চালাতে থাকে সেনাবাহিনী। বরফাবৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পলাশকে। আইসিইউতে থাকাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। ফুটফুটে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে পলাশের। ছুটি শেষ করে কর্মস্থলে ফেরার সময় স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন বিবাহবার্ষিকীতে এসে বাইরে ঘুরতে যাবেন।
শুক্রবার তার শহিদ হওয়ার খবর পরিবারে কাছে পৌঁছায়। খবর পেয়ে পলাশের স্ত্রী বুল্টি ঘোষ বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। কেঁদে ভাসাচ্ছেন মা। বাবাও শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন। শনিবার সকালে এই খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। দাদা মৃগাঙ্ক ঘোষ জানিয়েছেন, ‘ষষ্ঠীর দিন টোটোতে ভাইকে এগিয়ে দিই। ও যে আর ফিরবে না, ভাবতে পারিনি।’ সুজয়ের বাবা কৃষক। বাড়িতে রয়েছেন দাদা। ২০১৮ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ২৮ বছর বয়সী এই জওয়ান প্যারা কমান্ডার ৫ গ্রুপের এই সৈনিক ছিলেন। দাদা মৃত্যুঞ্জয়কে ফোন করে জানিয়েছিলেন অভিযানে যাচ্ছেন এখন ক’দিন কথা হবে না।





