সোমবার সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনা ছড়ালো দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে। প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের সামনে ধর্না মঞ্চ তৈরি করে বসে বিজেপি কর্মীরা বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। পুলিশ বাধা দিতে গেলে দেখা যায় চেনা চিত্র, পুলিশকে কার্যত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে! এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই মঞ্চে আসেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে নির্যাতিতা ডাক্তারি পড়ুয়ার পিতা।
শুভেন্দু ঘোষণা করেন, ‘এই মঞ্চ ৬ দিন চলবে’ এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলেন এই মঞ্চ থেকে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী তিনি একবারের জন্যও এই নির্যাতিতা ছাত্রীটির খোঁজ নিতে এখানে এলেন না, তাই বিরোধী দলনেতা হিসেবে নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াতে তার খোঁজ নিতেই আজ দুর্গাপুরে আসা। পাশাপাশি এদিন সিপিআইএম বিজেপির পর এদিন হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এসইউসিআই কলকাতা ও দুর্গাপুরের কর্মী-সমর্থকরা। সঙ্গে সঙ্গেই রণক্ষেত্রর চেহারা নেয় আই কিউ সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এসইউসিআই-এর কলকাতা এবং দুর্গাপুরের প্রতিনিধিরা নির্যাতিতার সাথে এবং পরিবারের সাথে কথা বলতে এলে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথ আটকায় হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা। তারপরেই ব্যারিকেড টানাটানি শুরু হয়। শুরু হয় নিরাপত্তারক্ষী ও এসইউসিআই কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি, তারপরেই হাতাহাতি থেকে রণক্ষেত্র চেহারা নেয় হাসপাতাল চত্বর। তবে এই উত্তাল পরিস্থিতির মাঝে কোন পুলিশের আধিকারিকদের বা পুলিশ কর্মীদেরকে দেখা যায়নি। এদিকে সাধারণের মনে প্রশ্ন উঠছে, মানুষের সহানুভূতির জায়গাটাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক লাভ তোলার এই ধরণ সমাজে নতুন নয়, তবে নিন্দনীয়। বিচারপ্রক্রিয়া চলছে, আইন তার নিজের পথে কাজ করছে, সেখানে রাজনৈতিক নাটক সাজিয়ে কারা সত্যিই ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, সেটাই আজ বড় প্রশ্ন ?
নারী নিগ্রহ বিরোধী দুর্গাপুর নাগরিক কমিটি এবং ‘ভয়েস অফ অভয়া ও ভয়েস অফ ওমেন’ কলকাতার পক্ষ থেকে সোমবার দুর্গাপুরের ঐ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তার বদলে স্মারকলিপি দেওয়া হয় সুপারকে। এদিনের এই কর্মসূচিকে ঘিরে হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কলেজের সামনে নিরাপত্তা রক্ষীদের পাহারায় লোহার ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়। এইসব সংগঠনের প্রতিনিধিদলকে ঢুকতে দিতে দেওয়া হয় না। এর ফল ব্যারিকেড ভেঙ্গে সংগঠনের সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চারজন প্রতিনিধিকে ভেতরে ঢোকার করার অনুমতি দেন।
তবে মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল মহিলা হয়েও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তার বদলে হাসপাতাল সুপার স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। ‘নারী নিগ্রহ বিরোধী দুর্গাপুর নাগরিক কমিটির’ পক্ষ থেকে লতা ঘোষ দাবি করেন, অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে এবং নারীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ভয়েস অফ অভয়ার পক্ষ থেকে ডাঃ বিপ্লব চন্দ্র এবং ডাঃ সজল বিশ্বাস, নার্সেস ইউনিটির পক্ষ থেকে ভাস্বতী মজুমদার দাবি করেন, আরজি কর কান্ডের মতো এই ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাসক দল কোনমতেই যেন আড়াল করার চেষ্টা না করে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে।
একইসাথে, নাগরিক সমাজকেও সজাগ থাকতে হবে। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয় এদিনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে। অন্যদিকে, এদিন এসইউসিআইয়ের কলকাতা এবং দুর্গাপুরের এক প্রতিনিধিদল নির্যাতিতা ও এবং পরিবারের সাথে কথা বলতে আসেন, কিন্তু ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথ আটকান হাসপাতালে নিরাপত্তা রক্ষীরা। তারপরেই ব্যারিকেড ধরে টানাটানি শুরু হয়। ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে। তারপরেই হাতাহাতি থেকে রণক্ষেত্র চেহারা। তবে এই উত্তাল পরিস্থিতি হলেও, সেই সময় হাসপাতাল চত্বরে কোন পুলিশের আধিকারিক বা কর্মীদেরকে দেখা যায়নি।





