পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে সক্রিয় দালাল চক্র। হাসপাতালে আসা গর্ভবতী মহিলা-সহ সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে রোগ নির্ণয় জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে বিরুদ্ধে গুরুতর এই অভিযোগ ফের সামনে আসায় অস্বস্তিতে পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা সহ সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে রক্ত পরীক্ষা এবং ইউএসজি মতো জরুরি পরিষেবা দ্রুত করিয়ে দেওয়ার নাম করে হাসপাতালের অন্দরেই বহিরাগতদের দালালের মাধ্যমে বেআইনিভাবে টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সমস্ত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই চক্র সক্রিয়।
সম্প্রতি দুটি পৃথক ঘটনা সামনে এসেছে, যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরদারির নিয়ে গভীর শিকড় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জানা গিয়েছে, বারাবাজার থানার সসাইডি গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী মাঝি পেটের ব্যথা নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরই ঘটে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। লক্ষ্মী মাঝির অভিযোগ, হাসপাতালের ভেতরেরই কেউ বা কারা রক্ত পরীক্ষার জন্য তাঁদের কাছে ২৫০০ টাকা দাবি করে বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হবে বলে জানায়। দ্রুতই একজন বহিরাগত এসে তাঁদের রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে যায় পরীক্ষার জন্য। রোগী ও তাঁর পরিবারের দাবি, সেই রাতেই তাঁরা হাজার টাকার মতন অগ্রিম দিয়েছেন এবং রিপোর্ট পেলে বাকি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
একথা স্বীকার করেছে বহিরাগত রক্ত সংগ্রহকারী ব্যক্তি। অন্যদিকে, পুরুলিয়ার মফস্বল থানার পীড়রগড়ইয়া বাসিন্দা সবুরণ বিবির হাতে কাঁটা বিঁধে যাওয়ার ঘটনায় তিনি হাতুয়াড়া আউটডোরে চিকিৎসার জন্য যান। তাঁর স্বামীর দাবি, সেখান থেকে ডাক্তারবাবুরা ছবি করার নির্দেশ দেন। সেই ছবি করতে সবুরণ বিবি পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এলে, সেখানে দালাল দের খপ্পরে পরেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের এক ব্যক্তি তাড়াতাড়ি ছবি করিয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁদের কাছ থেকে ২০০ টাকা চান। তাঁরা সেই মুহূর্তে ২০০ টাকা দেন। কিন্তু এরপরই ওই ব্যক্তি জানান, ‘আজ ডাক্তার উঠে গেছেন, পরের দিন হবে’।
শনিবার ছবি করানোর জন্য সবুরণ বিবি হাসপাতালে এলেও সেই ব্যক্তির আর দেখা মেলেনি। এ বিষয়ে হাসপাতাল সুপার সুকমল বিষয়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার না করলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। এই ধরনের ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব’। এছাড়াও তিনি গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জানান। সুপার বলেন, ‘বর্তমানে মাতৃ বিভাগের সমস্ত পরীক্ষা হাসপাতাল থেকেই করানো হয় এবং যেগুলি বাইরে থেকে করানো হয়, সেগুলোর ব্যবস্থাও স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সাহায্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই করে দেয়’।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের অভিযোগ কথা স্বীকার না করলেও হাসপাতালে ক্রমশ দালাল চক্র মারাত্মক ভাবে সক্রিয় হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ বিষয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে তীব্র কটাক্ষ করা হয়। বিজেপি নেতা জয়দীপ্ত চট্টরাজ জানান, হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে এরকম চক্র চলছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, লিখিত অভিযোগ না এলেও হাসপাতাল চত্বরে সক্রিয় দালাল চক্রের উপস্থিতি অস্বীকার করার উপায় নেই। দ্রুত এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে রোগী মহল।





