- Advertisement -spot_img
Homeরাজনীতিআসানসোলে অগ্নিমিত্রা'র নেতৃত্বে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ

আসানসোলে অগ্নিমিত্রা’র নেতৃত্বে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ

- Advertisement -spot_img

তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সংখ্যালঘু বা মাইনরিটি সেলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদের ছেলে তহসিন আহমেদের চিটফান্ড কেলেঙ্কারি প্রতিদিন গতি পাচ্ছে। এই কেলেঙ্কারিতে ৩৫০ কোটি টাকারও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সর্বস্বান্ত হয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদিন আগে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ তহসিন আহমেদ, শাকিল আহমেদ ও মহসিন আহমেদের নামে এফআইআর করে। কিন্তু পুলিশ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, তিনজনই ফেরার রয়েছেন।

 

এদিকে, বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। এদিন বিকেলে এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার ও সব পরিবারকে অবিলম্বে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে শুক্রবার বিকেলে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে বিজেপির নেতা ও কর্মীরা বার্নপুরেট চিত্রা মোড এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অন্যদিকে, এদিন আসানসোলে এই বিষয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা কংগ্রেস সংখ্যালঘু বা মাইনরিটি সেলের চেয়ারম্যান মহঃ ফিরোজ খান একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, এই কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের জেলা নেতা শাকিল আহমেদের ছেলে তহসিন আহমেদের মুল অভিযুক্ত। এখন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা শাকিল আহমেদের থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে এটা অসম্ভব। কারণ, সবাই জানেন যে শাকিল আহমেদ কেবল একটি ঘুঁটি মাত্র। এই কেলেঙ্কারির পিছনে আরও বড় কোন খেলোয়াড় ও মাথা রয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, ৩ হাজার পরিবার প্রতারিত হয়েছে। তার দাবি, আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক গোটা এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। কারণ, তার আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে এত বড় ঘটনা ঘটছে, আর বিধায়ক হিসেবে সেই সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এটা হতেই পার না। তিনি বলেন, আপনারা এখন সবাই অজ্ঞতার ভান করছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের টাকা লুট করা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, রেলপার এলাকার ঐ দলের সব নেতা এই ঘটনার সাথে জড়িত। অন্যথায় এত বড় ঘটনা ঘটানো অসম্ভব ছিল। কংগ্রেস নেতার বলেন, তহসিন আহমেদের ফোনের কল ডিটেইলস বার করা হোক, তাহলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। এদিকে, এই প্রসঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক বলেন, তহসিন আহমেদের এই ট্রেডিং ব্যবসার জন্য কোন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে বর্তমানে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। বর্তমানে আসানসোল পুরনিগমে ছুটি চলছে।

 

ছুটির পরে এই সম্পর্কে খোঁজ করে দেখা হবে। তাতে যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি অবৈধভাবে ব্যবসা করেছেন, তাহলে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে, দলমত নির্বিশেষে অন্যায় সহ্য করা হয় না। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের তরফে দলের মাইনরিটি সেলের জেলা সভাপতি তো সবকিছু বলেছেন। দল ও সরকার সর্বস্বান্ত হওয়া পরিবারের পাশে সবসময় রয়েছে। তবে, এই বিষয়ে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে বাংলায় বেশ কয়েকটি চিটফান্ড মামলা সামনে এসেছে। যেমন সারদা ও রোজভ্যালি। এরপরে আসানসোলে এতো বড়ো একটা আর্থিক প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে এলো। যার মধ্যে সাধারণ মানুষের টাকা জড়িত।

 

৩ হাজার মানুষের সাড়ে তিনশো কোটি টাকা ডুবে গেছে। এখনও কেউ তাদের টাকা ফেরত পাননি। তিনি আরো বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাজ্যের সবস্তরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও মন্ত্রীরা নিজেদেরকে মুসলিমদের শুভাকাঙ্ক্ষী বলে দাবি করেন। কিন্তু আসানসোলে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে তাতে তো মুসলিম পরিবারগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩ হাজারেরও বেশি পরিবার প্রতারিত হয়েছে। যখনই এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ পায়, তৃণমূল কংগ্রেস অভিযুক্ত সম্পর্কে বলে যে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার যথেষ্ট নয়। যাদের টাকা নেওয়া হয়েছে তারা দরিদ্র মানুষ। তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। বিজেপি বিধায়ক বলেন, এদিন রাস্তা অবরোধ করে শুধুমাত্র ট্রেলার দেখালাম। আগামী দিনে আরো বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।

 

প্রসঙ্গতঃ, আসানসোলের রেলপারে তহসিন আহমেদের তহসিন আহমেদের ট্রেডিং কোম্পানির নামে ৩৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু, টাকার সংখ্যাটা ৪৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তহসিন মাসে মাসে চড়া সুদ দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজার থেকে টাকা তোলা শুরু করেন ৫ বছর আগে থেকে। তিনি কারোর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা, কারোর থেকে, ৭ লক্ষ ও ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। কয়েকজন তো ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলেন। তহসিন কয়েক মাস কিছু লোককে টাকা দিয়েওছিলেন। কিন্তু পরে টাকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর, ঐসব লোকেরা যখন তাদের টাকা চাইতেন, তখন তিনি অজুহাত দেখাতে থাকেন।

 

তিনি টাকা ফেরতের জন্য ২০ অক্টোবর সময়সীমা দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন সেই সময়সীমা পার হয়ে যায়, তখন লোকেরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। তারা তাদের টাকা ফেরতের দাবি করতে শুরু করে। রেলপারে তার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখান তারা। এদিন ঐ এলাকারই বাসিন্দা মহঃ ইমাম নামে এক বৃদ্ধা বলেন, আমি ৭ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। তার ৫ লক্ষ টাকা নগদ ও ২ লক্ষ টাকা মোবাইল পেমেন্টের মাধ্যমে দিয়েছিলাম। টাকা ফেরত চাইলে সে আমার মতো অনেক লোককে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের নামে চেক দিয়েছিলেন। সব চেক বাউন্স হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমি একজন বয়স্ক ব্যক্তি। তাই ব্যাংকে যাইনি।

 

কিন্তু যারা ব্যাংকে গিয়েছিলেন তাদের চেক বাউন্স হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তহসিনের বাবা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। সে ছিলো ঐ দলের সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি। সম্প্রতি এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তাকে দেখে আমার মতে মানুষেরা তার ছেলেকে টাকা দিয়েছে। তহসিন আহমেদের পুরো পরিবার বছরের পর বছর ধরে এখানে বাস করে। তহসিনও বলতো যে, সে এখানে থাকে। লোকেরা তাকে টাকা দিত এই বিশ্বাসে যে তিনি সে কোথাও যাবেনা। কিন্তু আজ সে পালিয়ে গেছে। এখন আমাদের কি হবে?

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
Stay Connected
16,985FansLike
2,458FollowersFollow
61,453SubscribersSubscribe
Must Read
- Advertisement -spot_img
Related News
- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here