পুরুলিয়ার নিস্তারিণী কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘জঙ্গলমহল সাহিত্য মেলা’র উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু একদিকে যেমন পুরুলিয়ার কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দনে ভরিয়ে দিলেন, তেমনই অন্যদিকে ‘এসআইআর’ এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় আয়োজিত এই উৎসব যেন এদিন মুহূর্তের মধ্যে সাহিত্য আলোচনার বৃত্ত ছেড়ে প্রবেশ করল জ্বলন্ত রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে।
শুক্রবার প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে মেলার শুভ উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। মেলায় জঙ্গলমহলের সাহিত্য, সাহিত্যিকদের লেখা বই এবং চিত্র প্রদর্শনী ছিল মূল আকর্ষণ। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী পুরুলিয়ার প্রাকৃতিক রূপ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, পুরুলিয়ার মাটি সাহিত্যের বহু যুগ ধরে উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করেছে। এদিনের মঞ্চ থেকেই তিনি পুরুলিয়ার কবি ও সাহিত্যিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
মন্ত্রীসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো ,পুরুলিয়া পৌরসভার পৌর প্রধান নবেন্দু মাহালি, বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো, বিশিষ্ট কবি সাহিত্যে আবুল বসাকসহ একাধিক জঙ্গলমহলের কবি সাহিত্যিক এবং সাহিত্য প্রেমীরা ।
ইতিহাসের পাতা উল্টে মন্ত্রী মাইকেল মধুসূদন দত্তের পুরুলিয়া আগমনের প্রসঙ্গ তোলেন এবং মঞ্চে তাঁর পুরুলিয়া-সংক্রান্ত সনেটটি তুলে ধরে বাংলা সাহিত্যে এই জেলার গুরুত্বকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে বক্তৃতার এক ফাঁকে তাঁর কণ্ঠস্বরে গর্বের সুর শোনা যায় পুরুলিয়ার মেধার প্রসঙ্গে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের দুই ছাত্রের কথা, যারা উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমিস্টারে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। মন্ত্রী মঞ্চ থেকেই তাদের অভিনন্দন জানান এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতেই রাজনৈতিক প্রশ্নে সুর চড়ান শিক্ষামন্ত্রী। তাঁকে যখন ‘এসআইআর’ (SIR) সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দাগেন। ক্ষুব্ধ মন্ত্রী কঠোর ভাষায় বলেন, “ভোটের ঠিক আগে কেন্দ্র সরকার এক উদ্দেশ্য নিয়ে এই এসআইআর করছে। এর পিছনে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করছে।”
তিনি জোর দিয়ে দাবি করেন যে, এই বিতর্কিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একমাত্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম আওয়াজ তুলেছেন এবং রাজ্যবাসীকে সচেতন করেছেন। এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে বলেন, “এখন বাংলার একটাই স্বর—’জাস্টিস ফর প্রদীপ কর’। বাংলার মানুষ এই ঘটনার ন্যায়বিচার চাইছে।”
জঙ্গলমহলের সাহিত্য উৎসবের মঞ্চ এদিন এভাবেই এক নতুন মাত্রা পেল, যেখানে শিল্প-সংস্কৃতির ।





