চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোর বদলি সংক্রান্ত আদালত অবমাননার মামলা ঘিরে রাজ্যের উপর চাপ বাড়াল কলকাতা হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে রাজ্য সরকারকে দু’সপ্তাহের সময় দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়।
শীর্ষ আদালত সম্প্রতি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল, অবিলম্বে অনিকেত মাহাতোকে আরজি কর হাসপাতালে যোগদান করাতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী দু’সপ্তাহ পর রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আদালতকে জানাতে হবে। অনিকেত মাহাতোর আইনজীবী এদিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামার কপি বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে জমা দেন। এরপরই বিচারপতি জানান, আগামী ২ জানুয়ারি আদালত জানতে চাইবে, রাজ্য শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করেছে কি না।
উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালের আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁকে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ হাসপাতালে বদলি করার নির্দেশ দেয় রাজ্য। সেই নির্দেশ খারিজ করে দেয় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর একক বেঞ্চ। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, স্বাস্থ্য দফতরের সচিব এই পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) মানেননি। বিচারপতি অনিকেতকে দ্রুত আরজি কর হাসপাতালে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন। সেই সময় অনিকেতের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলেছিলেন, আমরা স্বাস্থ্য সচিবকে প্রশ্ন করেছিলাম, মোট ৮৭১ জনের মধ্যে শুধু দু’জনকে কেন বদলি করা হচ্ছে? কীসের ভিত্তিতে এই বদলি? আমাদের মনে হচ্ছিল, এখানে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। সেদিন স্বাস্থ্য সচিবের জবাব ছিল,আমরা রাজ্য প্রশাসন। যা মনে করব, তাই করতে পারি। একক বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানালেও, সেখানে নির্দেশ বহাল থাকে। এরপর রাজ্য সরকার হাইকোর্টের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। অনিকেত মাহাতোর বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁর র্যাঙ্ক ছিল ২৪।
আরজি কর হাসপাতালের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগে চারটি শূন্যপদ ছিল। সেখানে তাঁর চেয়ে উচ্চ র্যাঙ্কের একজনকে নিয়োগ করা হলেও, ২৬ ও ৩৪ র্যাঙ্ক করা দুই চিকিৎসকও সেখানে নিযুক্ত হয়েছেন। কিন্তু ২৪ র্যাঙ্ক করেও তিনি আরজি কর হাসপাতালে নিয়োগ পাননি। ৮৭১ জনের মধ্যে ৮৬৯ জনের পোস্টিং এসওপি মেনেই হয়েছে। কিন্তু অনিকেত মাহাতো-সহ মাত্র দু’জন চিকিৎসকের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। এই ‘অস্বচ্ছতার’ কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ আদালত খুঁজে পায়নি। ফলস্বরূপ হাইকোর্ট তাঁর বদলির সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়। এবার সুপ্রিম কোর্টও অনিকেতের পক্ষেই রায় দেওয়ায়, রাজ্য সরকার চরম চাপে পড়ল।





