শেষ পর্যন্ত স্বস্তি পেল সার্কাস কর্তৃপক্ষ। পরিবেশ দূষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলা সত্ত্বেও পার্ক সার্কাস ময়দানে সার্কাস বন্ধ করার আর্জি আপাতত খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থসারথী সেনের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এখনই এই মেলা বা প্রদর্শনী বন্ধ করার কোনও পক্ষপাতী নয় আদালত। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই যেহেতু এই আয়োজন করা হয়েছে, তাই সার্কাস চলায় কোনও আইনি বাধা নেই।
তবে পরিবেশ রক্ষা এবং প্রাতঃভ্রমণকারীদের স্বার্থের প্রশ্নে প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত কলকাতা পুরনিগমের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। প্রায় দশ বছর পর পার্ক সার্কাস ময়দানে সার্কাসের জন্য দু’মাসের অনুমতি দেয় পুরসভা। গত ১ ডিসেম্বর থেকে সেই প্রদর্শনী শুরুও হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই আদালতের দ্বারস্থ হন পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ। তাঁদের মূল অভিযোগ ছিল, শহরের ক্রমবর্ধমান দূষণের মাঝে এই ধরনের মেলা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে। মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ২০০৮ সালের একটি ঐতিহাসিক রায়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
তিনি জানান, পরিবেশ দূষণের কারণেই ওই একই জায়গা থেকে কলকাতা বইমেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র ছাড়া কীভাবে পুরসভা এই অনুমতি দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বুধবার শুনানির সময় হাইকোর্ট অবশ্য মামলাকারীদের এই যুক্তিতে এখনই সায় দেয়নি। বিচারপতি পার্থসারথী সেনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সার্কাসের দর্শক সংখ্যা বর্তমানে অনেকটাই কম। ফলে মানুষের ভিড় বা ‘ফুটফল’ থেকে তৈরি হওয়া দূষণের মাত্রা খুব একটা বেশি হওয়ার কথা নয়।
উপরন্তু সার্কাস একটি নির্দিষ্ট ঘেরা জায়গায় বা তাঁবুর মধ্যে হয়। তাই তৎক্ষণাৎ এটি বন্ধের প্রয়োজনীয়তা দেখেনি আদালত। তবে বিষয়টি একেবারে উড়িয়েও দেয়নি বেঞ্চ। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে মামলাকারীদের তাঁদের আপত্তির সপক্ষে বিস্তারিত হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কলকাতা পুরসভাকেও তাঁদের বক্তব্য জানাতে বলেছে আদালত। শীতকালীন ছুটির পর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। আদালত অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ না দিলেও বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সার্কাসের তাঁবু বাদে ময়দানের বাকি অংশ সাধারণ মানুষ ও প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
তাঁদের চলাফেরায় যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রশাসন ও সার্কাস কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি, পরিবেশের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা তদারকি করার জন্য কলকাতা পুরনিগমকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। ২০০৮ সালের বইমেলা সংক্রান্ত রায়ের উদাহরণ থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনি সমস্ত নথি খতিয়ে দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাইছে হাইকোর্ট। আপাতত আগামী দুই মাস পার্ক সার্কাসের আকাশে সার্কাসের রঙিন আলো জ্বলতে আর কোনও বাধা থাকল না।





